আনছার আলী বিশেষ প্রতিনিধিঃ
‘শান্তি শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও প্রগতি’ এই মূলনীতিতে পুলিশ বাহিনীতে যারা দেশ সেবায় গৌরবের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর সার্কেলের বর্তমান সহকারী পুলিশ সুপার ফারহানা আফরোজ জেমি তাদের অন্যতম। বর্তমান কর্মস্থলে যোগদান করার প্রথম ১৩ মাসে তিনি ১১ বার শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করেন। শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতির পুরষ্কার জিতেন ৮ বার। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এই লেডি অফিসারের আছে আইজিপি পদক প্রাপ্তির গৌরবও। কর্মক্ষেত্রে সব ধরণের অপরাধ,মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে আপোষহীন তিনি। পুলিশী বা আইনী সেবা প্রত্যাশীদের জন্য তার দরজা সব সময় উম্মুক্ত। জনগণকে সেবা ও দেশ সেবায় এগিয়ে যাওয়ার পথে তিনি অবিচল।
টাঙ্গাইলের মধুপুর সার্কেলাধীন মধুপুর ও ধনবাড়ী থানায় বিগত প্রায় ২০ মাস যাবত দায়িত্ব পালন করছেন এই লেডি অফিসার। সাম্প্রতিক তার সাথে আলাপচারিতায় জানা গেলো নানা তথ্য। এ স্টেশন ছাড়ার শেষ প্রান্তিকে তিনি। তিনি জানান,তার ঘরে নতুন অতিথি( সন্তান) আসছে।
এ অবস্থায় তিনি গত শেষ দুই মাসে প্রচুর কাজ করছেন। চাকরি জীবনে এ দুই মাসের মতো কাজ কখনও করেননি। ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন বৈষম্য বিরোধী জুলাই আগস্টের আন্দোলনে। দুই থানার তরুণ পুলিশ অফিসারদের সহযোগিতায় অপরাধীদের আটক, স্পর্শকাতর মামলার আসামী গ্রেফতার,মাদক দমনের অভিযানসহ নানা পুলিশী কাজে সফল হয়েছেন। শারীরিক প্রতিকূলতা বা পরিবেশ প্রতিকূলতায় তিনি দমেননি। প্রতিটি সফল অভিযানের জন্য তিনি তার সহযোগী পুলিশ সদস্যদের পরিশ্রম ও মেধার প্রশংসা করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিগত জুলাই আগস্টের আন্দোলনে ছাত্র জনতার গণঅভ’ূত্থানের সময় অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল থাকতে হয়েছে পুলিশকে। কৌশলী পেশাদারিত্বের কারণে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলায় আন্দোলনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি । এটি তার জন্য একটি বিশেষ অর্জন বলে জানান তিনি। ওই সময়কার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তার সামনের দিনের পথ চলার পাথেয় হয়ে থাকবে বলে অভিমত দিয়েছেন। মধুপুর ধনবাড়ী কে তিনি শান্তির জাযগা মন্তব্য করে এ অঞ্চলের নাগরিকেদের প্রশংসা করেছেন।
তার ভাষ্য মতে,কর্মক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন, বাহিনীর মর্যাদা বৃদ্ধির কার্যকারণসহ বিভিন্ন ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহে মনোনীত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের আইজিপি ব্যাজ নামের পদক দেওয়া হয়। জানা গেলো, ইতোমধ্যে ‘আইজিপিস এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ’ পুলিশ বাহিনীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা এ পদক অর্জন করেছেন তিনি। মধুপুর সার্কেলে তিনি প্রায় ২০ মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। আর ২০ মাসের মধ্যে মাত্র ১৩ মাসেই তিনি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের অধিকারী হয়েছেন। ১১ বার শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করে স্বীকৃতির পুরষ্কার পেয়েছেন ৮ বার।
মাগুরা জেলার পশ্চিম স্টেডিয়াম পাড়ায় জন্ম গ্রহণকারী নারী পুলিশ অফিসার ফারহানা আফরোজ জেমি শিক্ষা জীবন শেষে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসাবে রংপুরে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ৩৬তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপারের সুপারিশ পেয়ে ২০১৮ সালে ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। পুলিশী কর্মজীবনে গাজীপুর জেলা পুলিশের এএসপি ট্রাফিক ও পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে এএসপি এসএসএফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল সহকারী পুলিশ সুপার মধুপুর সার্কেলে যোগদান করেন। দায়িত্ব পালনে ঈর্ষণীয় সাফলতা দেখিয়ে এখানকার মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেন তিনি।
“পুলিশ জনগণের বন্ধু” তিনি এই গানকে নিজের মধ্যে ধারণ করেন। জনগণকে সেবাদানে তার আনন্দ।সে আনন্দ প্রাপ্তি অব্যাহত রাখতে চান তিনি পুরো কর্মজীবনে।এজন্য তিনি সবার কাছে সহযোগিতা ও দোয়া প্রত্যাশী। ব্যক্তিজীবনে ফারহানা আফরোজ প্রথম জমজ ২ কন্যা সন্তানের জননী। শিগগির তিনি আবার মা হতে চলেছেন। তার স্বামী শহিদুল ইসলাম সাব রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত আছেন।
সার্কেল এসপি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারহানা আফরোজ জেমির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন সমকালের সাংবাদিক আনছার আলী।