পাভেল ইসলাম মিমুল (রাজশাহী প্রতিনিধি)
রাজশাহীর বাঘায় সিপিএসসি, র্যাব-৫ রাজশাহীর অভিযানিক দলের সদস্যদের বৈধ সরকারি কর্ত্তব্য পালনে বাধা প্রদানসহ হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি, ধাক্কা ধাক্কি করে বসতবাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে গেট আটকিয়ে আবদ্ধ করে হ্যান্ডকাপ, র্যাব জ্যাকেট, সরকারি রেইনকোট ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত বুধবার (১১-০৯-২০২৪) রাতে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- উপজেলার আলাইপুর (গাবতলীপাড়া) জিবরুল মীর (৪২),মোঃ রুবেল (৩২), মোঃ মিনজুল (৩২), আলাইপুর (নাপিতপাড়া), রাকিব আলী (৩০), উপর আতারপাড়া গ্রামের বেল্লাল আলী (৩৫), শাকিল আহম্মেদ (১৯), আবুল কালাম (৩৫), বারশতদিয়ার গ্রামের জয়নাল আবেদীন (৩৫), বেল্লাল হোসেন (২৫), মহদীপুর গ্রামের জামাল হোসেন (৫০), হৃদয় আলী (১৯), মহদীপুর (পশ্চিমপাড়া) ফজলু হক (৩৫), মোঃ বাদশা আলী (৩৬),মহদীপুর (সবজিপাড়া)’র রিপন আলী (৪২), ভানুকর গ্রামের নজরুল ইসলাম (৫০), কেশবপুর গ্রামের রেজাউল শেখ (৫৮)। বৃহস্পতিবার (১২-০৯-২০২৩৪) দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০-০৯-২০২৪) রাতে র্যাব-৫ এর ডিএডি ইমরান আলী বাদি হয়ে উপজেলার বারশতদিয়াড় গ্রামের রাজা ইসলামকে ১ নম্বর আসামী করে তার বোন রুপালি, স্ত্রী বৈশাখী, পিতা আরমান আলী, রাহেলা মেম্বর সহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনের বিরুদ্ধে বাঘা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। (মামলা নম্বর-৫ তাং-১০-০৯-২০২৪)। মামলার এজাহারে বারশতদিয়াড়, আলাইপুর, ভানুকর, বিনোদপুর, রুপপুর, রাউথা গ্রামের লোকজনের নাম রয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সোমবার
(০৯-০৯-২০২৪) রাতে মাদক দ্রব্য উদ্ধার, নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেপ্তার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অফিসার ও ফোর্সসহ চারঘাট ট্রাফিক মোড়ে অবস্থানকালে জানতে পারেন মাদক ব্যবসায়ী রাজা ইসলামের বসতবাড়িতে সে সহ কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ফেন্সিডিল মজুদ রেখে বিক্রয়ের জন্য অবস্থান করছে। রাত সাড়ে ১০টায় সঙ্গী ও অফিসার ও ফোর্সসহ মোটরাসাইকেল, পিকআপ ভ্যানে ঘটনাস্থল এলাকায় পৌছে আনুমানিক ১কিলোমিটার দুরে পিকআপ পার্টিকে রেখে সঙীয় মোটরসাইকেল পার্টিকে নিয়ে রাজা ইসলামের বাড়ির কাছাকাছি পৌছেন।
তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২জন ব্যক্তিকে আটকানোর চেষ্টা করেন, এবং ১জনকে নাম জিজ্ঞাসা করলে তার নাম রাজা ইসলাম বলে জানায়। র্যাবের পরিচয় প্রদান করে তার বাড়িতে ফেন্সিডিল মজুদ আছে কি-না, জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বৈধ সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও আক্রমন করার উদ্দেশ্য সোরগোল করে বলে কয়েকদিন আগে আমার বড় ভাইকে ৮৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ধরেছে, আজকে আবার এসেছে। তোমরা কে কোথায় আছো এগিয়ে এসো। এরা পাইছে কি? এদেরকে ধরো।
এ সময় সংঘবদ্ধ জনতা দেশীয় লাঠি, লোহার রড, ধারালো হাসুয়া সহ মামলার বাদি, তার সঙীয় এলএস সোহাগ হোসেন, এ এস আই নজরুল ইসলাম ল্যাঃ কর্পোঃ জাহদুর রহমান, দুলাল হোসেন, নায়েক আফছার আলী, কনেস্টবল মিজানুর রহমানের উপর অতর্কিত হামলা করে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি, ধাক্কা ধাক্কি করে বসতবাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে গেট আটকিয়ে আবদ্ধ করে রাখে।
মুঠোফোনে বিষয়টি জানানোর পর, মোটরসাইকেল ও পিকআপ পার্টির সদস্যগন তাদের উদ্ধারের জন্য যুক্ত হয়। রাজা ইসলামের পিতা আরমান আলী বলে এর আগে এক ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন, এই ছেলেকে নিয়ে যেতে দিবনা বলে অজ্ঞান হওয়ার ভান করে শুয়ে পড়ে। এ সময় রাজা ইসলামসহ তার বোন, মা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কিলঘুষি মারে। আরমান মারা গিয়েছে বলে গুজব ছড়ায় রাহেলা মেম্বার। অন্যান্য আসামীরা সঙ্গীয়দের মারধর করে ৪ জোড়া চায়না হ্যান্ডকাপ, ২টি র্যাব জ্যাকেট, ২টি সরকারি রেইনকোট ছিনিয়ে নেয়। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন আহত র্যাব সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, মাদক ব্যবসায় জড়িত সন্দেহে সাদা পোষাকে আসা র্যাব সদস্যরা রাজা ইসলামকে মারধর করে। সোরগোল শুনে গ্রামের লোকজন এগিয়ে যায়। ঘটনার প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতার নিয়ম বহির্ভুত আচরণে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। আরমান আলী নামে একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল বলে জানান স্থানীয় রবিউল আওয়াল।
রাজা ইসলামের ভাষ্য, বছর খানেক আগে তিনি সৌদি থেকে বাড়িতে এসে গ্রামের হাবিবুর এর মোড়ে মুদি ব্যবসা শুরু করেছেন। সোমবার রাতে ২টি মোটরসাইকেলে সিভিল পোষাকধারি তিনজন ব্যক্তি, দোকান থেকে ১০০ থেকে ১৫০ ফিট দুরে চাইপাড়া এলাকায় নিয়ে বলে তুই মাদক ব্যবসা করিস মাদক কোথায় আছে বল। আমি মাদক ব্যবসা করিনা বলতেই সেখানে তারা মারধর করে। বাড়িতে তল্লাশির সময় পিতা, মাতা স্ত্রী, বোনকে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি তার। হামলা চালিয়ে র্যাব সদস্যদের মারধরের বিষয়ে বলেন, কারা কি করেছে তা জানিনা।
মনিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দীন রিয়াল জানান, বিষয়টি বাঘা থানা পুলিশকে জানানোর পর, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিয়ে যান। পরে দিন হ্যান্ডকাপ, র্যাব জ্যাকেট, সরকারি রেইনকোট, স্টিক লাঠি, ১টি হেড ফোন থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ব্যাগের ভেতরে পাওয়া গেছে বলে জানান। মারধর ও লাঞ্চিতের অভিযোগ অস্বিকার করে মামলার বাদি ইমরান আলী বলেন, মাদকের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করেছে সেখানকার জনগন।
তার দাবি, র্যাব অন্যায়ভাবে কিংবা আক্রোশমূলক কোন কাজ করেনি। মামলা ও র্যাব সদস্যদের উপর হামলা ও উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, র্যাবের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় ১৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।