পাভেল ইসলাম মিমুল (স্টাফ রিপোর্টার)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ন আহবায়কঃ মোঃ আবু তাহের (২৬) এর বিরুদ্ধে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে (২৪) শ্লীলতাহানি ও অশোভনীয় আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে গত বছর ২০২৩সালের ১৫ই আগস্ট ওই শিক্ষার্থীর ভাই ওমর ফারুক (১৮) মহানগরীর মতিহার থানায় নিজে বাদী হয়ে তাহেরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও অশোভনীয় আচরণের একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পরের মাসে ১০/৯/২০২৩ তারিখে অভিযুক্ত আবু তাহের নিজের ভুল স্বীকার করেন। নিজ বিভাগের শিক্ষক,রাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও উপস্থিত সাক্ষীগনের সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করলে যে কোন আইনগত শাস্তি মাথা পেতে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন লম্পট তাহের।
এ সময় বিভাগের শিক্ষক ও দলীয় নেতা কর্মীদের অনুরোধে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মুচলেকায় সহি করে আপোষ করেন। কিন্তু আপোষ হওয়ার পর আবু তাহেরের সাহস আরো বেড়ে যায়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন কৌশলে মানসিক টর্চারিং করতে থাকে এবং সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে লম্পট তাহের।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন,ওই সময় আমার মাস্টার্স পরীক্ষার কয়েক মাস বাকি ছিল। আমার বিভাগের শিক্ষকগণ এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। বলে সামনে তোমার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা,লেখাপড়ার ক্ষতি হবে,তাহের নিজের ভুল স্বীকার করেছে থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নাও।
এসময় শিক্ষকগণ ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন লম্পট তাহেরের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা কিছুই করেননি তাই লম্পট তাহেরের সাহস বেড়েই চলেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরো বলেন,আমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এতদিন অনেক সহ্য করেছি,আর না। এখন আমি তাহেরের বিচারের জন্য ব্যবস্থা নেব। আমি নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছি না।
কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসের ভেতরে লম্পট তাহের আমার পিছু নেয়,পথ রোধ করে বলে তোকে দেখে নিব,যা করতে হয় তাই করবো। আমার প্রস্তাবে সাড়া না দিলে তোকে শান্তিতে থাকতে দেবো না। এ সময় আমি চিৎকার দিলে লম্পট তাহের সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আমি নিজের জীবনের নিরাপত্তা চাই ও লম্পট তাহেরের বিচার চাই। সে যেন আর কোন মেয়ের জীবনে অভিশাপ হতে না পারে।
আমি তাহেরের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ নয় শ্লীলতাহানির মামলা করব। সে বিগত দিনে আমার হলের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। আমাকে মেসেজ করেছে বাইরে বের হবার জন্য। বারবার ফোন করেছে বিভিন্ন নাম্বার থেকে।
আমি ওই লম্পট তাহেরের আচরণে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এ বিষয়ে আবু তাহেরের মুঠো ফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমার বিরুদ্ধে মতিহার থানায় ওই শিক্ষার্থীর ভাই ওমর ফারুক (১৮) বাদী হয়ে একটি শ্লীলতাহানি ও অশোভনীয় আচরণের অভিযোগ করেন।
পরের মাসে (সেপ্টেম্বর) আমি আমার ভুল স্বীকার করে আপোষের মাধ্যমে মুচলেকা জমা দিয়েছি থানায়। তারপর থেকে আর কখনোই আমি ওই শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করিনি। আমার বিরুদ্ধে দলীয় ষড়যন্ত্র চলছে,আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এ সকল অভিযোগ দিয়েছে। সামনে আমাদের কমিটি গঠন হবে,আমি যেন কোন পদে থাকতে না পারি, এটাই দলীয় ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।
আমি কোনদিন ওই শিক্ষার্থীকে কোন ধরনের অশালীন আচরণ করিনি। শুধুমাত্র মোবাইল ফোনে চ্যাটিং করতাম কিন্তু কোন খারাপ উদ্দেশ্যে নয়। সে আমার জুনিয়র হওয়ার সুবাদে তাকে আমি একদিন নোট বই দিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে তাহেরের বাবা সাইদুর রহমানের মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন,অভিযোগের বিষয়ে আমি শুনেছি কিন্তু সেটা তো আপোষ হয়ে গেছে।নতুন করে শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করার বিষয়টা আমার জানা নাই। আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলে বিষয়টা দেখব।
এ বিষয়ে রাবি ছাত্র দলের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাফিউল ইসলাম জীবন বলেন, আবু তাহের আমাকে শ্লীলতাহানির অভিযোগের কথা বলেছিলেন। শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির ঘটনা সত্য আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
আবু তাহেরের বিষয়টা কেন্দ্রে জানানো হয়েছে এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ডাক্তার রবিন নিজেও কেন্দ্রে কথা বলেছে। আমরা এখন কেন্দ্রের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছি,কেন্দ্র থেকে কোন আদেশ আসলেই সেই আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।