আবু মোঃ শোয়েব ডন ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)প্রতিনিধিঃ
কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়া পদে ভূয়া সনদে চাকুরী করছে গৃহবধূ শাহিদা খাতুন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া ইউনিয়নে। সে ভরকরাকইর গ্রামের ছোমেদ আলীর মেয়ে। এ বিষয়ে গারট্ট গ্রামের হালিমা বেগম বাদী হয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মহা পরিচালক বরাবর ও নিয়োগ বাতিল ও ভূয়া সনদ বাতিল চেয়ে আবেদন করায় জেলা শিক্ষা অফিসের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তারা মূল সনদ পত্রের বিষয়ে তদন্ত না করে শুধু দায়সারা প্রতিবেদন দাখিল করে অভিযুক্তের পক্ষে সুপারিশ করেন এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায় শাহিদার দাখিলকৃত জন্ম নিবন্ধন ৮ম শ্রেণী পাশের সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১লা মার্চ ১৯৯৪ সাল এবং একই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ ৭ আগষ্ট ১৯৮৪ সাল। অর্থাৎ চাকরি নিতে প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় ভূয়া সনদ তৈরী করে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরজমিন গিয়ে জানা যায় গৃহবধু শাহিদা খাতুন অনেকটাই স্ব-শিক্ষিত লোক। সে ১৯৯৮ সালে কদমতলী গারট্ট নয়াপাড়া গ্রামে আব্দুল জলিলের সাথে তার পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয় তিনি ২ সন্তানের জননী। পূর্বের আইডি কার্ড অনুযায়ী তার বয়স ৪০ বছর। তার বড় ছেলে সানির বর্তমান বয়স ২৪ বছর। চাকুরীর ক্ষেত্রে তার জন্ম তারিখ অনুযায়ী বয়স বেশী হওয়ায় নিয়োগে আবেদনযোগ্য না হওয়ায় সে ভূলে ভরা এক ভূয়া প্রত্যয়ন পত্র দাখিল করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক মধ্য বয়সী যুবক জানায় (১) শাহিদা খাতুন মাইধারচালা উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখা পড়া না করেই ঐ বিদ্যালয়ের অজান্তে প্যাড, সীল, স্বাক্ষর জাল করে প্রত্যয়ন পত্র দাখিল করেন। (২) তার তৈরী করা জন্ম নিবন্ধন ও নতুন আইডি কার্ড অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১লা মার্চ ১৯৯৪ সাল। সে অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩০ বছর। এবং শাহিদার ছেলে সানি ২০১৯ সালে কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস,এসসি পাশ করে, সে অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ২৪ বছর। সে ক্ষেত্রে মায়ের বয়স ৩০, ছেলের বয়স ২৪, পার্থক্য হয় ৬ বছর। (৩) শাহিদার বাবার বাড়ি ধলাপাড়া থেকে ঐ বিদ্যালয়ের দূরত্ব ১২ কিঃ মিঃ দূরে। স্বামীর বাড়ি কদমতলী গারট্ট নয়াপাড়া গ্রামে সেই খান থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ৫ কিঃমিঃ। সে এলাকায় লেখা পড়া না করে ৬ বছর বয়সে দূরে গিয়ে লেখা পড়া করে যাহা হাস্যকর। (৪) সে ২০২৩ সালের ১লা জুন চাকুরিতে যোগদান করে অথচ চাকুরি হওয়ার ৪ মাস পর ৯ই অক্টোবর আইডি কার্ডের বয়স কমাতে আবেদন করে। (৫) প্রত্যয়ন পত্রে বাবা মার নাম স্বামীর বাড়ির ঠিকানায় করা হয়েছে (৬) প্রার্থীর মধ্যে যারা এস,এসসি পাশ তারা প্রথম না হয়ে, প্রায় স্ব-শিক্ষিত শাহিদা খাতুন পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। জানা যায় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মোটা অংকের টাকা সুবিধা গ্রহন করে এমন হাজারো ভূলের জন্মদিয়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন ও স্থানীয়দের নিকট থেকে জানা যায় ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন আয়া পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। পরে ঐ পদে শাহিদা খাতুন সহ ৪জন প্রার্থী আবেদন করেন। ঐ সময় শাহিদার বয়স বেশী হওয়ায় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নার যোগসাজশে ৫কিঃমিঃ দূরে মাইধারচালা গন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১০ বছর বয়স কম দেখাইয়া ভূয়া সনদ পত্র সংগ্রহ করে আবেদন করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৫মে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৪জন প্রার্থীর মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে শাহিদা খাতুন প্রথম হওয়ায় নিয়োগ কমিটি শাহিদা খাতুন কে আয়া পদে নিয়োগ দিলে একই বছর ১লা জুন সে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
শাহিদা খাতুনের ৮ম শ্রেনীর প্রত্যয়ন পত্রের বিষয়ে মাইধারচালা গন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন এর আগেও সাংবাদিকরা তথ্য চাওয়ায় আমরা খাতা পত্র চেক করে দেখেছি কদমতলী গারট্ট নয়াপাড়া গ্রামের শাহিদা নামে কোন শিক্ষার্থী আমাদের বিদ্যালয়ে লেখা পড়া করে নাই এবং কি এই সীল, প্যাড, স্বাক্ষর আমাদের না। এই প্রত্যয়ন পত্র নিঃসন্দেহে বানানো এবং ভূয়া।
এসব অভিযোগ এর বিষয়ে অভিযুক্ত শাহিদা খাতুন বলেন আমর জন্ম তারিখ ১৯৯৪ সাল ২০০০সালে আমার বিয়ে হয়েছে। স্বামীর বাড়ি থাকিয়া ২০০৯ সালে ৮ম শ্রেনী পাশ করেছি। ১৯৯৪ সালে জন্ম নিয়ে ৬ বছর বয়সে ২০০০সালে বিয়ে হয় কি ভাবে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এসব বিষয়ে কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এ বিষয়ে আমি কোন কথা বলবো না। যেখানে জেলা শিক্ষা অফিস ও ডিসি সাহেব তদন্ত করে কোন ভূল পায় নাই সেখানে নতুন করে আমার বলার কিছুই নাই।
ভূয়া সনদে চাকুরির বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম এর কাছে মুঠোফোন জানতে চাইলে তিনি জানান সার্টিফিকেট যদি জাল থাকে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব তার। সার্টিফিকেট যদি জাল থাকে জবাব তারা দিবে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।