মুজাহিদ খান কাওসার (নিজস্ব প্রতিবেদক)
শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন আজ রোববার, প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা আজ দেবী দুর্গাকে সিঁদুর দেওয়ার মাধ্যমে সিঁদুর খেলা করবেন। পরে আরতি, শোভাযাত্রা সহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। এর আগে তিথির কারণে গতকাল শনিবার একই দিনে মহানবমী ও বিজয়া দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকাল ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে প্রথমে মহানবমীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হয়। ওই পূজা শেষেই দশমীর লগ্ন হওয়ায় সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের মধ্যে করা হয় বিজয়া দশমী বিহিত পূজা ও দেবীর দর্পণ বিসর্জন। তবে গতকাল নবমীর দিন হওয়ায় আজ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।
সাভার রাজফুলবাড়ীয়া বাজার, শ্রীশ্রী মা আনন্দময়ী
ও শশ্বান কালী মন্দির কমিটির সভাপতি ডাঃ নারায়ন চক্রবর্তী ও সাধারন সম্পাদক মনরঞ্জন কর্মকার (মনা) বলেন, তিথি অনুযায়ী, মহানবমী ও বিজয়া দশমীর লগ্ন একই দিনে হওয়ায় আজই (গতকাল) এই দুটি পূজা হয়েছে। শাস্ত্রমতে, দেবীর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। মা বিদায় নিয়েছেন। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবী দুর্গা, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাঁকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তাঁর এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। দোলায় বা পালকিতে আগমনের পর এবার দেবী দুর্গার গমন হচ্ছে ঘোটক বা ঘোড়ায়।
গতকাল দুপুরের আগেই মহানবমী ও বিজয়া দশমীর পূজা শেষে দেবীর দর্পণ বিসর্জনের পরে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভক্তরা মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেন। পরে এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে ঘুরে দুর্গা দেবীর প্রতিমা দর্শন করে ভক্তরা মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেন। তবে বিসর্জনের ক্ষণ এগিয়ে আসায় ভক্তদের মনে ছিল বিদায়ের সুর। সর্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, ভক্তদের ভিড় তুলনামূলক কম। ছোট ছোট দলে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মণ্ডপে আসছিলেন, মাকে প্রণাম ও প্রার্থনা করে পুরোহিতের কাছ থেকে প্রসাদ নিয়ে অন্য কোনো মণ্ডপের উদ্দেশে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাউন্ড সিস্টেমে দুর্গাপূজাকে ঘিরে তৈরি বিভিন্ন গান বাজছিল।
পূজামণ্ডপে গিয়েও ভক্তদের ভিড় কম দেখা গেছে। প্যান্ডেলের ভেতর চেয়ারে বসে যে যাঁর মতো গল্প-আড্ডা দিচ্ছিলেন। কেউ কেউ মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিমার সঙ্গে ছবি-সেলফি তুলছিলেন। সন্ধ্যার দিকে ভক্তদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। তখন আড়মোড়া ভেঙে ঢাকিরাও নেমে পড়েন ঢাকঢোল নিয়ে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার ঢাকার মোট ১১টি স্থানে বিসর্জন দেওয়া যাবে। এর মধ্যে লালবাগের ওয়াইজ ঘাট ও লালকুঠি ঘাট, ওয়ারীর পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট, আলমগঞ্জ ঘাট, শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাট ও বালু নদের ঘাট, উত্তরার আশুলিয়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট, রায়েরবাজার, মিরপুর আমিনবাজার ব্রিজের উত্তর পাশ, মতিঝিলের শ্রীশ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের পাশের পুকুর এবং মতিঝিলের মান্ডা আমিন মোহাম্মদ লেক।
বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। স্বাভাবিক নিরাপত্তার পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশও মোতায়েন থাকবে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, পলাশী মোড় ও বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় তিনটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। পলাশীর মোড়, রায় সাহেব বাজার ও ওয়াইজ ঘাটে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি ওয়াচ টাওয়ার। এ ছাড়া ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন টিম ও সোয়াত দল প্রস্তুত থাকবে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, দুপুরের পর থেকে বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী সন্ধ্যার মধ্যে বিসর্জন শেষ করা হবে।